ই-টি-বি-এর ছোট্ট ইতিহাস
রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়
(বত্রিশ বছর নক্সভিলে ছিলাম। ই-টি-বি-এর সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পূজা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য দায়ী সকলের নিঃস্বার্থ সাহায্য। কিন্তু সকলের নাম এই ছোট্ট লেখায় দিতে পারিনি। তার জন্য দুঃখিত।]
[মুখবন্ধ - নক্সভিলের বাঙ্গালী সমাজের ওপর একটা ছোট্ট ইতিহাস লেখার জন্য শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি আমাকে অনুরোধ জানাল। আর এটাও বলল যে এই ইতিহাস ইস্ট টেনেসি বেঙ্গলি অ্যাসোশিয়েশন অর্থাৎ ই-টি-বি-এর ওয়েব সাইটে দেয়া হবে। খুব ভাল চিন্তা! আনন্দের সঙ্গে রাজী হয়ে কলম - মানে কিবোর্ড ধরলাম। নক্সভিলের স্মৃতি অনেক। কিন্তু এখন 'লাইক' আর এমোজির যুগ - লম্বা লেখা পড়ার সময় কম। সেই কথা ভেবে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করলাম। নক্সভিলে আসি ১৯৮৬ সালে। তাই এই ইতিহাস ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু। তার আগে নক্সভিলে বাঙ্গালীরা যারা ছিলেন তাঁরাও সরস্বতী পূজো করতেন। তবে ১৯৮৬-৮৭ সালে সকলের প্রচেষ্টায় নক্সভিলে বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক সংস্থার জন্ম হয় পরে যার নাম দেয়া হয় ই-টি-বি-এ। নক্সভিলের প্রাক্তন বাসিন্দা ইন্দ্রনীল ব্যানার্জি ই-টি-বি-এর প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করেন - বোধ হয় ২০০৩/২০০৪ সাল নাগাদ। তখন ইন্টারনেট সবে শুরু হয়েছে, ইউটিউব আর স্মার্ট ফোনের জন্ম হয়নি। ফেসবুক তখনও আঁতুড় ঘরে। তাই ওয়েবসাইটে ভিড় ছিলনা। কিন্তু এখন ফেসবুকের দৌলতে ই-টি-বি-এ সারা পৃথিবীর নাগালে!]
নক্সভিলে বাঙ্গালী সমাজ - ১৯৮৬ সাল
আমেরিকায় তেরো বছর থাকার পর ১৯৮৬ সালে যখন সপরিবারে সাদার্ণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নক্সভীলে আসি তখন ভাবিনি যে জীবনের দীর্ঘতম সময় নক্সভিলে কাটবে। কলকাতায় কেটেছে সাতাশ বছর আর নক্সভিলে বত্রিশ। কিন্তু সেই বত্রিশ বছর এত দ্রুত গতিতে কেটে গেল মনে হয় যেন দশ বছর। বলাই বাহুল্য - ভাল জিনিষ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় - অনেকটা আইসক্রিমের মতন বা বিশেষ বন্ধুর সাথে নিভৃতে সিনেমা দেখতে যাওয়ার মতন! নক্সভিলের জীবন অনেকটা সেরকমই ছিল।
সাদার্ণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নক্সভীলে আসা একটা বিরাট পরিবর্তন। কিছুটা চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। তবে নক্সভীলে পৌছিয়ে স্থানীয় বাঙ্গালীদের সাথে আলাপ পরিচয় হওয়ার পর ভালোলাগার শেকড়টা খুব তাড়াতাড়ি বাড়তে লাগলো। ক্যালিফোর্নিয়ার বন্ধুরা প্রায়ই ফোন করত। কেমন জায়গা - দক্ষিনি ইংরেজি বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে কি না ইত্যাদি প্রশ্ন। শেষে একদিন যখন বললাম যে নক্সভিলের দোকানে ধনেপাতা আর বড় বড় রামধনুরঙা ট্রাউট পাওয়া যায় তখন বন্ধুরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল - ভাবল, যাক, বাঙ্গালী ঠিক জায়গায় পৌঁছে গেছে!
১৯৮৬ সাল নাগাদ নক্সভিল, ওকরিজ ও কাছাকাছি অন্য শহর নিয়ে প্রায় এগার-বারো বাঙ্গালী পরিবার ছিল। আর ইউ-টিতে ছিল দুজন বাঙ্গালী গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট - সুজিত দাস ও অশোক চৌধুরী। নক্সভিলে সবচাইতে পুরনো বাঙ্গালী বাসিন্দা ছিলেন বিমল ও নমিতা পাল। বিমলদারা তখন ওকরিজে থাকতেন। দুঃখের বিষয় হলো ১৯৮৮ সালে নমিতাদি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যান। অন্যান্য বাঙ্গালী যারা নক্সভিলে থাকতেন তাঁরা হলেন অরুণ ও কল্পনা চ্যাটার্জি, শিব ও তামসী মুখার্জি, রনেন ও সুমিতা চ্যাটার্জি, উদিত ও সুমিতা চৌধুরী, আর দেবাশিশ ও নন্দিতা কর। এছাড়া ওকরিজে ছিলেন সলিল নিয়োগী আর শঙ্কর মিত্র পরিবার। আরও কিছু বাঙ্গালী যারা পঞ্চাশ থেকে একশ কুড়ি মাইলে দূরে থাকতেন তাঁরা হলেন অজয় ও সুচরিতা মুখার্জি, প্রশান্ত ও বুলু রায়, সুভাষ ও রিনা সাহা, আর সত্যব্রত ও সুমিতা চ্যাটার্জি।
ইউ-টির প্রফেসর ডাঃ অরুণ চ্যাটার্জি বা অরুনদা বি-ই কলেজে আমার দাদার সহপাঠী ছিলেন। তাই ১৯৮৬ সালে নক্সভিলে পৌছিয়েই অরুনদাকে ফোন করলাম। তখন জানতে পারলাম যে নক্সভিলে বাঙ্গালীর সংখ্যা অনেকটা জোয়ারভাটার মতন। কথাটা খুবই সত্যি। ১৯৮৬-৮৭ সালে টি-ভি-এর দৌলতে জোয়ার এলো। তখন বাঙ্গালীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় একশ ছুঁইছুঁই। সেই সময় বিমল ও আরতি বোস, আর হরিনাথ ব্যানার্জিও অন্য জায়গা থেকে নক্সভিল আসেন।
বাঙ্গালীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে শুরু হয়ে গেল প্রতি উইকএন্ডে বাঙ্গালী পার্টি। টুনার চপ, বেগুনি, রসমালাই, মুরগির কাটলেট ও আরও নানারকম মুখরোচক খাবার আর আড্ডায় পার্টি বেশ জমে উঠত। তবে বাঙ্গালীর প্রিয় পাঁঠার মাংস ও রুই মাছ ছিল দূরের মরীচিকা। নক্সভিলে দুটোর কোনটাই পাওয়া যেত না। কিন্তু যখন জানা গেল যে অ্যাটলান্টায় দুটোই পাওয়া যায় তখন সুযোগ পেলেই - বিশেষ করে পুজোর সময় - বাঙ্গালী ক্যারাভ্যান অ্যাটলান্টা মুখো হ'ত। রথ দেখা আর কলা বেচা একই সাথে হয়ে যেত।
কিছুদিনবাদে, বাঙ্গালীর মাছের প্রতি যে দুর্বলতা আছে সেটা কি করে আমেরিকান মাছওয়ালারা জেনে গেল। তাই নক্সভিলের চিড়িয়াখানার কাছে বার্লিংটন ফিস মার্কেট রুই ছাড়াও ইলিশ আনতে শুরু করে। তবে এই ইলিশ মাছ নর্থ ক্যারোলিনার মোহনার মাছ। ইংরেজিতে যাকে বলে শ্যাড। কেবল বসন্তকালেই পাওয়া যেত, আর বসন্তকালেই সরস্বতীপুজো। তবে সরস্বতীপুজোতে মায়ের নামে উৎসর্গ করে জোড়া ইলিশ কেউই অপচয় করেনি। শ্যাড খেয়ে আমি কিন্তু স্যাড হইনি।
সরস্বতী ও দুর্গা পূজা
খাবারের সমস্যাটা সমাধান হবার পর সাথে সাথে আমরা 'বারো মাসে তেরো পাবন' না হলেও কয়েকটা আবশ্যকীয় সামাজিক অনুষ্ঠান শুরু করলাম। বছর শুরু হতো সরস্বতী পূজো দিয়ে। মে মাস নাগাদ হতো বৈশাখী অনুষ্ঠান, তারপর গরমকালে পিকনিক আর অক্টোবর নাগাদ বছর শেষ হতো বিজয়া সন্মিলনী দিয়ে। সেই অনুষ্ঠানে মরিস টাউন, জনসন সিটি, বিগ স্টোন গ্যাপ, ব্রিস্টল আর লন্ডন (কেন্টাকি) শহরের বাঙ্গালীরাও যোগ দিতেন।
নক্সভিলের পুরনো বাসিন্দাদের কাছে শুনেছি যে ১৯৮৬ সালের আগেও নক্সভিলে সরস্বতী পুজো হতো। কিন্তু বাঙ্গালীর সংখ্যা তখন খুবই কম ছিল। বিরাট করে সরস্বতী পূজা প্রথম হয় ১৯৮৭ সালে। নক্সভিলে তখন প্রায় একশ বাঙ্গালী। কিন্তু পূজো করবে কে? সেই সমস্যা সমাধান করে দিল নিবেদিতা - আমার সহধর্মিণী। আমি যে আমেরিকাতে ১৯৭৭ সাল থেকে সরস্বতী পূজো করছি সেই খবরটা নিবেদিতা গর্বের সঙ্গে বঙ্গসমাজে পরিবেশন করল। ব্যাস, আমি হয়ে গেলাম নক্সভিলের বেসরকারি পুরোহিত। তবে সেটা কেবল সরস্বতী পুজোর জন্য।
আমি বিশেষ আপত্তি করলাম না কারণ গত দশ বছর পাঁচালী পড়ে পড়ে পূজো করার ব্যাপারটা রপ্ত করে ফেলেছিলাম। সেই ১৯৭৩-এ দেশ থেকে আনা বামাদেব ভট্টাচার্যের লেখা সরস্বতীপূজার পাঁচালী ছিল আমার রক্ষাকবচ। বইটা এখনও আমার কাছে আছে। বইটার অনেকটা অংশ লাল কালিতে দাগানো। আর তার সাথে ছিল তিনটে ফুলস্কেপ বা লিগাল সাইজের কাগজে লেখা পূজা পদ্ধতি। কলকাতার পুরোহিতের নির্দেশ ছিল যদি বিরাট বারোয়ারি পূজো হয় তবে পুরো বইটা পড়তে, আর যদি শ-খানেক লোকের পূজো হয় তা হ'লে দাগান অংশটুকু পড়তে। আর যদি দশ-বারো জনের পূজো হয় তাহলে তিনটে ফুলস্কেপ কাগজে লেখা মন্ত্রটুকু পড়লেই হবে। সুন্দর! অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা! তবে পুরোহিতের নির্দেশ অনুযায়ী নক্সভিলে বইয়ের দাগান অংশটুকু পড়তাম।
১৯৮৭ সালে বাঙ্গালী সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন বিজয় ভর। ঠিক হল সরস্বতী পূজো হবে সকালে আর রাতে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরস্বতী পুজো আর অন্য সব অনুষ্ঠান তখন ওআইসগার্বার রোডের চার্চ অফ দ্য সেভিআরে হতো। প্রথম কয়েকবার মরিসটাউনের অজয়দা অর্থাৎ অজয় মুখার্জির তৈরি স্টাইরোফোমের প্রতিমা পুজো হয়েছিল। পরে সুজিত ও সুচিতা দাসের কলকাতা থেকে আনা বাড়ীর প্রতিমা পুজো হতো।
১৯৮৮ সালে শহরের অবাঙ্গালীদের প্রচেষ্টায় তৈরি হ'ল মন্দির অর্থাৎ হিন্দু কালচারাল সেন্টার বা এইচ-সি-সি। সেখানে আমরা দুর্গাপূজা করতে পারতাম, কিন্তু দুর্গাপূজা অনেক লম্বা। তারপর মূর্তি আর পূজোর মন্ত্রের বই চাই। সেইজন্য আমরা বেশী এগোইনি। শেষে নানান অনুষ্ঠান করে আমরা যখন পাকা হলাম তখন দুর্গাপূজা হবে কি হবে না তাই নিয়ে মিটিং ডাকা হ'ল তপন মুখার্জির বাড়ীতে। সেটা ১৯৯৪ সাল। ইউ-টি তে তখন অনেক বাঙ্গালী ছাত্রছাত্রী। দুর্গাপূজার কথা শুনে সবাই নেচে উঠল। ভোটাভুটি হ'ল। আমি এবং আরও দুজন বাদে বাকি জনা চল্লিশেক সভ্যরা পূজো করার পক্ষে ভোট দিল। আমার মনে হয়েছিল যে এই জোয়ার-ভাঁটার বাঙালি সমাজে দুর্গাপূজা করলে পাকা বাসিন্দাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। সে ধারনাটা ভুল প্রমাণিত হতে বেশী সময় লাগেনি। কারণ জোয়ারের স্রোতে নতুনরা যারা এলো তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা সমস্ত কর্মসূচী অব্যাহত ও সুষ্ঠুভাবে পালন করে চলল।
নক্সভিলে বাঙালিদের প্রথম দুর্গাপূজা হয় ১৯৯৪ সালে। তখন আমাদের প্রতিমা ছিলনা। মন্দিরের অনেক প্রতিমার সামনে বসে আমাদের পূজো করতে হয়েছিল। মন্দিরের পুরোহিত ভাট্জী কিংবা মুনিজী পূজারী হতেন। প্রথম পুজোয় আমি, প্রশান্ত রায় ও নলিনী বসু যজমান হিসেবে বসে পুরোহিতের নির্দেশ অনুযায়ী পূজো করেছিলাম। সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা অবধি পূজো। তারপর মাখা,খিচুড়ি, লাবড়া, মিষ্টি ইত্যাদি। একদম শেষে ভাসানের নাচ!
কয়েক বছর পূজো ভালভাবে করতে পারায় আমাদের মনে বেশ উৎসাহ এল - দ্বিধাবোধ কেটে গেল। তখন আমরা মূর্তির খোঁজ করতে আরম্ভ করলাম। ১৯৯৯ কি ২০০০ সালে খবর এলো যে নিউ জার্সির এক বাঙ্গালী সংস্থা তাদের পুরনো প্রতিমা দিয়ে দিতে চায়। আমরা সাথে সাথে সেই প্রতিমা নিয়ে এলাম। এক চালায় শোলার দুর্গাপ্রতিমার সৌন্দর্য আর নিখুঁত কাজ দেখে সবাই মুগ্ধ। ২০০১ সাল নাগাদ ভাটজীর বদলে আমরা নিজেরা পূজো করার ভার নিলাম। ভাটজী ভালোই পূজ্য করতেন। তবে পূজা চলাকালীন বাঙ্গালীদের কলকুঞ্জন মাঝে মাঝে খুব বেশী উচ্চগ্রামে উঠে গেলে ভাটজী বিরক্ত হতেন। সবদিক ভেবে শেষে আমি আর লন্ডন-কেন্টাকির সত্যব্রত আর সুমিতা চ্যাটার্জি পূজো করার ভার নিলাম।
দুঃখের বিষয় সেই শোলার প্রতিমা বেশীদিন রাখা যায়নি। সারা বছর বাক্সবন্দী প্রতিমা থাকত মন্দিরের নীচের একটা ঘরে। কিন্তু গণেশের বাহনের দৌরাত্ম্যিতে প্রতিমার বিভিন অংশ লোপ পেতে আরম্ভ করে। তাই আমরা আবার অন্য প্রতিমার খোঁজ আরম্ভ করলাম। ভাগ্যক্রমে ২০০৬/০৭ সালে সাউথ ক্যারোলিনার কলম্বিয়া শহরের বাঙ্গালী সংস্থা তাদের পুরনো ঠাকুর আমাদের দান করল।
সেই মাটির প্রতিমা খুবই সুন্দর ছিল কিন্তু এক চালায় ছিল না। তিনটে কাঠের বাক্সে প্রতিমা মন্দিরের নীচের ঘরে রাখা হ'ত। সেই প্রতিমা আমরা ২০১৪ সাল অবধি পুজো করি। কিন্তু এইচ-সি-সিতে বা মন্দিরে প্রতিমার তিনটে বাক্স রাখা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। সেই সমস্যার সমাধান করলো অমিত নস্কর। অমিতের বাড়ীতে প্রতিমা স্থান পায়। তাহলেও আমরা ঠিক করলাম যে কলকাতা থেকে একচালায় প্রতিমা আনতে হবে। ভাগ্যক্রমে কৌশিক ব্যানার্জির আত্মীয়ের মাধ্যমে কৌশিক পাল নামে কুমারটুলির এক শিল্পীর সাথে নক্সভিলের সুজিত দাসের যোগাযোগ করে দেয়। ২০১৫ সালে সুজিত দাস (এখন অ্যাটলান্টার বাসিন্দা) যখন কলকাতায় যায় তখন কুমারটুলিতে গিয়ে একচালার প্রতিমার বায়না দেয়। জুলাই মাসে সেই প্রতিমা সাগরপারী দিয়ে নিউ জার্সির বন্দরে পৌঁছয়। কাস্টম্সের কাগজপত্র সই করে আমি ই-মেইল মাধ্যমে পাঠাই। তারপর কৌশিক বিশ্বাস আর শুভদীপ চক্রবর্তী প্রতিমা নক্সভিলে আনার ব্যাবস্থা করে। তিন কৌশিকের সহযোগিতায় নতুন ঠাকুর আনার প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়। নতুন প্রতিমা কিছুদিন স্টোরেজে থাকার পর নগেন্দ্র সিং নিজের বাড়ীতে প্রতিমা রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা করে। নক্সভিলে এখনও সেই প্রতিমার পূজো হয়।
২০১০/১১ সাল নাগাদ বাঙ্গালীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করল। অনেক বছর ধরে একটা অলিখিত নিয়ম নতুনরা পালন করতো। নতুনরা নক্সভিলে পৌঁছে সবাই আমাকে ফোন করত। মজা করে নিবেদিতা বলত - "তুমি নক্সভিলের বাঙ্গালী শেরিফ। তাই নতুনরা নক্সভিলে এসেই তোমায় ফোন করে।" নক্সভিলের বাঙ্গালী সমাজ একটা নির্ঝঞ্ঝাট একান্নবর্তী পরিবারের উপযুক্ত উদাহরণ - সবাই সাহায্য করার জন্য উদগ্রীব। সেই সমাজের শেরিফ হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।
যাইহোক, নক্সভিলের সেই একান্নবর্তী পরিবার পৃথিবীর অন্য সব সংস্কৃতির মতন 'মধুরেন সমাপয়েত' ধারা উৎসাহভরে পালন করা শুরু করলো। বেশ কয়েক বছর আগে একমাত্র মাখা পুজোমণ্ডপে বানানো হতো - পুজো হয়ে যাবার পর। কিন্তু দুর্গাপুজার ভোগ, লাবরা, চাটনি, পায়েস, দুরকমের মিষ্টি, ছোটদের জন্য লুচি ইত্যাদি বাঙ্গালীরা ভাগাভাগি করে বাড়ীতে বানিয়ে মণ্ডপে নিয়ে আসতো। কিন্তু এইচ-সি-সি হওয়ার পর বাঙ্গালীদের বিরাট সুবিধে হ'ল - বাড়ীতে কেবল ঠাকুরের ভোগ, তরকারি, চাটনি ও সবার জন্য মিষ্টি বানান হতো আর পুজোর বাকি সব রান্না ও বুধু ভাদুরির বিখ্যাত পায়েস হতো এইচ-সি-সিতে। এটা মনে হয় ২০১০ সালে শুরু হয়। ষষ্ঠীর রাতে এই রান্নায় অনেকে সাহায্য করতে আসতো যাদের অনেকে এখনও নক্সভিলে থাকে। পরে বারোয়ারী রান্না ষষ্ঠীর বদলে পুজোর দিন সকালে হতো। রান্নার সাথে চলত মজাদার আড্ডা আর হাসি-ঠাট্টা। সেই জমজমাট আবহাওয়া কলকাতার পুজোমণ্ডপের কথা মনে করিয়ে দিতো।
কলকাতার পুজো মণ্ডপের কথা আরও বেশী করে মনে পরতো পুজোর দিন সকালে। মায়েরা ও ইউ-টির ছাত্রীরা জমায়েত হতো পুজোর সব আয়োজন করতে। ফল কাটা, মালা গাঁথা, নৈবেদ্য ইত্যাদি তৈরি করা একটা বিরাট কাজ - বিশেষ করে দুর্গাপুজার সময়। সাহায্যের জন্য অনেক ছোটরাও মায়েদের সাথে আসত। বেশীর ভাগ সময় সরস্বতী পুজো হতো ইউনিটারিয়ান চার্চে বা চার্চ অফ দ্য সেভিওরে। কিন্তু দুর্গাপুজা হতো এইচ-সি-সিতে। এইচ-সি-সির ওপরতলায় মহিলারা যখন পুজোর জোগাড় যন্ত্র করতে ব্যাস্ত, নিচে রান্নাঘরে পুরুষেরা তখন খিচুরি, তরকারি আর বেগুনি বানাতে ব্যাস্ত। পুজো মণ্ডপে আর রান্নাঘরে হাসিঠাট্টা দেখে যদিও "অধিক সন্ন্যাসীর" কথা মনে পরতো, কিন্তু সব জোগাড়যন্ত্র নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হতো
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (একদম শেষে অনুষ্ঠানের ফর্দ দিলাম)
১৯৮৭ সাল। তুষার ঘোষ তখন সদ্য নক্সভিলে এসেছেন। ভদ্রলোক নাটক করতে ভীষণ উৎসাহী। তাঁরই উদ্যোগে ও পরিচালনায় নক্সভিলের বাঙ্গালীরা পরিবেশন করল দেড়ঘণ্টা লম্বা (প্রায় ১.৮ গিগাবাইট) মনোজ বোসের লেখা বিখ্যাত নাটক "কাঞ্চনরঙ্গ"। বাড়ীর চাকর ছিল গল্পের নায়ক। ঘটনাচক্রে আমাকে চাকর সাজতে হয়েছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ লম্বা নাটক। এখন যখন ভিডিও দেখি তখন দুটো কথা মনে হয় - প্রথমত, নাটক ভালই করেছিলাম আর দ্বিতীয়ত, বাড়ীর চাকর মনে হয় লুকিয়ে মণ্ডা-মিঠাই খেতো! কাঞ্চনরঙ্গ নাটকে সুজিত দাসও অভিনয় করে। অন্যান্য অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা বহুদিন আগে নক্সভিল ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যান।
১৯৮৮ থেকে ২০১২/১৩ সাল অবধি ছিল ই-টি-বি-এর স্বর্ণযুগ। সেই সময় বিভিন্ন উপলক্ষে ছোটদের ও বড়দের নাচ, গীতিআলেখ্য, ছোট নৃত্যনাট্য এবং একক সঙ্গীতও হয়েছিল। অনেক কিশোর-কিশোরী নাচ ছাড়াও পিয়ানো, ক্ল্যারিনেট ও বেহালা পরিবেশন করে। ইউ-টির ছাত্ররা, পোস্ট-ডক এবং ও-আর-এনেলের বৈজ্ঞানিকরাও অনেক নাটক করে। শেষে সেই নাটকের বর্ণনা দিলাম।
১৯৮৭ - ২০০০ সালে নক্সভিলে তখন অনেক নতুন ও পুরনো বাঙ্গালী - ফলে অনেক গাইয়ে আর নাচিয়ে ছিল। আরতিদি (আরতি বোস), অরুণ দা (অরুণ চ্যাটার্জি), ক্ষমা ঘোষ, রিনি ঘোষ, রাজা বোস, মোহিত পাল, দীপশ্রী সেন, তুহিন সেন, সুস্মিতা মৈত্র ও আরও অনেকে গানে যোগ দিতেন। ইউ-টির অনেক ছাত্রছাত্রীও খুব ভাল গাইয়ে ছিল। বেশ কয়েকবার তারা গ্রুপ-সঙ্ পরিবেশন করে। মরিসটাউনের অজয়দা অনেকবার হাওয়াইয়ান গীটার দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়েছিলেন। বড়দের নাচে অনেকবার অংশগ্রহণ করে নিবেদিতা গাঙ্গুলী, কল্পনা কাঁড়ার, দীপশ্রী সেন, নন্দিতা কর, সুমিতা চৌধুরী ও আরও অনেকে। মাঝেসাঝে অসীম উৎসাহী হরিনাথ ব্যানার্জি বা সবার হরিদা আধুনিক বাংলা গান পরিবেশন করতেন। চিরনবীন ও অকৃতদার হরিদা তখন আশী ছুঁই-ছুঁই।
উনিশশ নব্বইয়ের দশকে নক্সভিলে বাঙ্গালী বাচ্চা, আর কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল প্রায় কুড়ি-বাইশ। সেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরম্ভ করলাম। নিবেদিতা আর অন্য মায়েরা ছোট মেয়েদের নাচের অনুষ্ঠানের ভার নিল, আর আমি উদ্যোগী হলাম কিশোর-কিশোরীদের দিয়ে নাটক করা নিয়ে। ১৯৯০ সালে সুকুমার রায়ের 'অবাক জলপান' আর ১৯৯১ সালে নারায়ণ গাঙ্গুলির লেখা 'ভীম বধ' নাটক হবে বলে ঠিক হলো। কিন্তু দুটো নাটকেই চরিত্রের সংখ্যা মোটে ছয় কি সাত। এদিকে নক্সভিলে নাটক করবার মতন কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা দশ-বারো। কাউকে বাদ দেয় যাবেনা। তাই নাটকে চরিত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলাম আর গল্প ঠিক রেখে নতুন সংলাপ লিখলাম। সেইজন্য 'অবাক জলপান' আর 'ভীম বধ’ নাটকের নাম পাল্টে দিয়ে নতুন নাম দিলাম - 'জলবিভ্রাট' ও 'কুরুক্ষেত্রে কেলেঙ্কারি।’ অপ্রত্যাশিতভাবে দুটো নাটক খুবই ভাল হয়েছিল। বাবা-মা'রা খুবই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদের প্রতীকস্বরূপ আমাকে একটি শীতের জ্যাকেট উপহার দেন। এখনও মাঝে মাঝে সেই ভিডিও দেখি আর ভাবি সুকুমার রায় ও নারায়ণ গাঙ্গুলী দেখলে কি মন্তব্য করতেন কে জানে!
পিকনিক - পাঁঠার মাংস - মিউসিকাল চেয়ার - ক্রিকেট ম্যাচ
প্রথমবার পিকনিক হয়েছিল গ্রিনভিলের স্টেট পার্কে, ১৯৮৭ সালে - নক্সভিল থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল দূরে। তার আগে নক্সভিলে পিকনিক হতো কিনা সেটা শিব বা তামসী মুখার্জি বলতে পারবেন। তারপর থেকে পিক্নিক্ হতো কাছাকাছি পার্কে - মেল্টন হিল,কনকর্ড, লেনর সিটি বা নরিস লেক পার্কে। পিকনিকে গ্রিল্ড চিকেন, ভুট্টা পোড়া, ঘুগনি, মুড়িমাখা ইত্যাদি মুখরোচক খাবার থাকত। পরে ২০০১/২ সাল নাগাদ ঠিক হল পিকনিকে পাঁঠার মাংস রান্না হবে। অন্যান্যদের সাহায্য আর উৎসাহে নির্ভর করে আমি প্রায় তিরিশ পাউণ্ড পাঁঠা রান্না করলাম পার্কে। পার্থ বিশ্বাস আর কৌস্তভ রায় সেই রান্না মাংসের ছবি তুলে ছবির গায়ে নতুন স্লোগান লিখল -"আসছে বছর আবার হবে।" সেই ছবি এখনও আমার কাছে আছে। পরে পিকনিকে কাজ কমাবার জন্য পাঁঠার মাংস আমি বাড়ীতে বানিয়ে নিয়ে যেতাম। অমল ও পম্পা দত্ত আগের দিন রাতে সেই রান্নায় আমাকে সাহায্য করতে আসত। এই প্রথা বেশ কয়েক বছর চলেছিল।
খাওয়া ও আড্ডা ছাড়া পিকনিকে মিউসিকাল চেয়ার আর ক্রিকেট খেলা হতো এবং দুটোতেই - বিশেষ করে মিউসিকাল চেয়ারে - সবাই যোগ দিতো। ক্রিকেট খেলাও বেশ জোরদার হতো। দু-একজন মহিলাও ব্যাট নিয়ে মাঠে নামতেন। তবে খেলার মজা জিইয়ে রাখার জন্য মহিলাদের জন্য "আন্ডারহ্যান্ড বোলিং" করা হতো। মাঝেসাঝে হর্স্শু-ও খেলা হতো।
উপসংহার
১৯৮৭ সাল থেকে নক্সভিলের বাঙ্গালী সমাজ ধীরে ধীরে একটা একান্নবর্তী পরিবারের মতন গড়ে ওঠে। এটা একটা বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য অথবা ইংরেজিতে যাকে বলে distinguishing feature। একান্নবর্তী পরিবার অনেকটা জালের মতন - একটা সুতোয় টান দিলে অন্য সুতো সেই টান উপলব্ধি করে। সকলের অবদানে গড়ে ওঠে সেই জাল। নক্সভিলে এই জাল বুনতে যারা সাহায্য করেছিলেন তাঁদের অনেকে এখনও নক্সভিলে আছেন, অনেকে অন্য কোন শহরে চলে গেছেন, আবার অনেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন। আশা করবো নক্সভিলের বাঙ্গালী সমাজ চিরকাল একান্নবর্তী পরিবারের জালে আবদ্ধ থাকবে।
নক্সভিলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের কালানুক্রমিক তালিকা (সব মনে নেই।)
১৯৮৭ সাল থেকে সরস্বতী পূজো হয়ে আসছে। প্রতিবছর পূজোর সময় ছোট বাচ্চা থেকে কিশোর-কিশোরীরা নাচ, গান, আবৃত্তি, পিয়ানো, বেহালা, ইত্যাদি পরিবেশন করেছে।
বড়দের গীতিআলেখ্য, বড়দের ও ছোটদের নাচ - ১৯৮৭ সাল থেকে সরস্বতীপূজা, বৈশাখী আর বিজয়া অনুষ্ঠানে শুরু হয়েছিল। আরতিদি (আরতি বোস), অরুণ দা (অরুণ চ্যাটার্জি), ক্ষমা ঘোষ, রিনি ঘোষ, রাজা বোস, মোহিত পাল, দীপশ্রী সেন, তুহিন সেন ও আরও অনেকে গানে যোগ দিতেন। কিছুদিন আগে (কবে মনে নেই) বৈশাখী বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
১৯৮৭ সরস্বতী পূজো - বড়দের নাটক, মনোজ বসুর "কাঞ্চনরঙ্গ"। প্রায় নয়-দশজন অভিনয় করেছিল। তারা কেউ আর নক্সভিলে থাকেনা। আমি হয়েছিলাম বাড়ীর চাকর, পাঁচু (হিরো)। আর যারা এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন তাঁরা হলেন - ক্ষমা ঘোষ (নায়িকা), রনেন চ্যাটার্জি, বিজয় ভর, দীপশ্রী সেন, সুজিত দাস ও আরও দুজন (নাম মনে নেই)।
১৯৯০ ছোটদের নাটক - সুকুমার রায়ের "অবাক জলপান" নাটকের ভিত্তিতে "জলবিভ্রাট। লেখক - রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়। অভিনয় করেছিল অমিত বোস (পথিক); তুহিন গাঙ্গুলি; সোমক মিত্র; দেবযানী কর; জয় ঘোষ; অয়ন বাগ্চি; দিব্য সেন; প্রতীক সাউ; বৈজ্ঞানিক - অভিজিত পাল ; ছোটছেলে - দুজন; নাম মনে নেই।
১৯৯০ ইউ-টি স্টুডেন্টদের নাটক - সুকুমার রায় আর পরশুরামের লেখার ছোটছোট অংশ নিয়ে ১২-অঙ্কের (৪০ মিনিট) নাটক। সে নাটকে অংশগ্রহণ করে - অরূপ ব্যানার্জি, দিব্যেন্দু মুখার্জি, হিমাদ্রি ব্যানার্জি, নন্দিতা ব্যানার্জি, গার্গী মুখার্জি, কৌশিক রায়, শীলা রায়, শুভেন্দু ঘটক, দেবাশিস বসাক, হেমন্ত দে, শুভাশিস ভট্টাচার্জি , সুব্রত রায়, ও দেবপ্রসাদ কাষ্ঠ।
১৯৯১ ছোটদের নাটক - বারোজন ছেলেমেয়ে নিয়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'ভীমবধ" নাটকের ভিত্তিতে "কুরুক্ষেত্রে কেলেঙ্কারি।" দুর্যোধন - অমিত বোস; ভীম - তুহিন গাঙ্গুলি, কৃষ্ণ - সোমক মিত্র; এছাড়া অভিনয় করেছিল পাঞ্চালী সাউ, দেবযানী কর, রিয়া পাল, প্রতীক সাউ, জয় ঘোষ, দিব্য সেন, ও অয়ন বাগচি। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা - রঞ্জন গাঙ্গুলি।
১৯৯৫/৯৬ সালে কলকাতার বিখ্যাত শিল্পী শৌনক চ্যাটার্জি দুবার নক্সভিলে এসেছিলেন এবং গান গেয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে অবাঙ্গালী মহলের কিছু বন্ধু-বান্ধবও এসেছিল।
২০০৩ বড়দের নাটক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "খ্যাতির বিড়ম্বনা।" অভিনয় করেছিল ছন্দক বসু (প্রধান চরিত্র), বুধেন্দ্র ভাদুরি (দুটো চরিত্রে), রঞ্জন গাঙ্গুলি, মঞ্জিরি পাটকর, অরিন্দম মৈত্র, ভিপিন ওয়াধাভন, ও আরও অনেকে।
২০০৩/০৪ বড়দের নাটক - পরশুরামের "চিকিৎসা বিভ্রাট।" অভিনয়ে ছিল বুধেন্দ্র ভাদুরি, রঞ্জন গাঙ্গুলি, শাশ্বতী ওয়াধাভন, অমল দত্ত, পার্থ বিশ্বাস, ছন্দক বসু ও তরুণ (পদবী মনে নেই)।
সরস্বতী ও দুর্গাপূজার রান্না - প্রথম বেশ কয়েক বছর দুর্গাপুজার পঙক্তিভোজনের খাবার ভাগাভাগি করে বাড়ীতে বানান হতো। পরে, ২০১০ সাল নাগাদ এইচ-সি-সিতে এই খাবার বানানো শুরু হয়। এই ব্যাপারে এগিয়ে আসে বুধু ও ঝুম্পা ভাদুরি, নগেন্দ্র ও দেবযানী সিং, মনোজয় গোস্বামী, শুভদীপ চক্রবর্তী, অনামিকা মিশ্র, সুদীপ শীল, শ্রীপর্ণা ও কৌশিক ব্যানার্জি, কৌশিক বিশ্বাস, নম্রতা সাহা, মায়াঙ্ক গয়াল, অমিত নস্কর, সুজিত দাস ও আরও অনেকে। পুজোর দিন সকালে বিরাট যৌথ প্রচেষ্টায় বানান হতো বেগুনি ও পাঁপড় ভাজা। পুজো উপলক্ষে পুরনো বাসিন্দাদের অনেকে খুব ভালো মিষ্টি বানাতেন। তাঁদের মধ্যে এখনও যারা নক্সভিলে আছেন তাঁরা হলেন আরতি বোস, সুচরিতা মুখার্জি ও তামসী মুখার্জি। তবে বাঙ্গালীর কাছে সব খাবারের মধ্যে পুজোর দধিকর্মা বা মাখা একটা বিরাট আকর্ষণ। আরতিদির নেতৃত্বে এই মাখা বানানো হ'ত। বারোয়ারী খাবার এইচ-সি-সিতে হলেও, ঠাকুরের ভোগ ইত্যাদি বাড়ীতে বানানো হতো। কখনো সুমিতা চ্যাটার্জি বানাত আবার কখনো আমি বানাতাম।
২০১৩ - নভেম্বর মাসে বিজয়া সন্মিলনে একটি নাটক হয়েছিল (নাম মনে নেই)। সেই নাটকে অভিনয় করেছিল অভীক মুখার্জি, শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি, সাবর্ণি চ্যাটার্জি ও আরও অনেকে (নাম মনে নেই)।
ক্রিকেট খেলা আর মিউসিকাল চেয়ার - দুটোই ছিল পিকনিকের মজাদার ও আকর্ষণীয় খেলা। যুগের সাথে পা মিলিয়ে পুরুষ আর মহিলা এই দুই খেলাতেই যোগ দিত। এর অনেক ছবি আর ভিডিও পুরনো বাসিন্দাদের কাছে পাওয়া যাবে।
Dr. Ranjan Ganguly received his M.Sc. degree from the University of Calcutta (Kolkata). In 1973 he came to the U.S. for his graduate education. In 1978 he received his Ph.D. degree from the University of Nebraska, Lincoln. After his graduation Dr. Ganguly continued his research in Lincoln on mammary cancer and in 1980, he joined the University of California–Irvine as a Senior Research Fellow. In 1986, he joined the Zoology Department of the University of Tennessee (UT) in Knoxville as an Assistant Professor, and later he joined the Department of Biochemistry, Cellular and Molecular Biology (BCMB) at UT and became a full professor. Dr. Ganguly also served as the Associate Head of the BCMB department from 2005-08. At UT, Dr. Ganguly supervised the research and thesis of fifteen graduate and fifteen undergraduate (Hons.) students. His research was funded by grants from USDA. He retired in 2018.
In memory of his wife Dr. Nivedita Ganguly, Dr. Ganguly established an endowment in 2022 to give a Graduate Fellowship Award in the BCMB Department and an undergraduate fellowship in the Vols Teach program every year.